মোহাম্মদ শাহজামান শুভ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
২০১৫ সালের ০২জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত, “বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট বিকাশ মল্লিক জানান, কুমিল্লা বোর্ডে এ বছর ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৬৫ জন পাস করেছে। ফেল করেছে ২৩ হাজার ৫০৪ জন। এতে গণিতে ১৬ হাজার ৮০৫ জন, ইংরেজিতে ৪ হাজার ২৩৮ জন ও বিভিন্ন বিষয়ে ২ হাজার ৪৬১ জন ফেল করেছে। গণিতে ফেল করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ৯ হাজার ৯৫ জন, মানবিকের ৭ হাজার ২৭ জন ও বিজ্ঞানের ৬৮৩ জন।“
উপরের পরিসংখ্যানটিতে প্রতীয়মান হয় সিংহভাগ অকৃতকার্যই গণিতে। এর কারণ হিসেবে গণিত শিক্ষকের অভাব, অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে গণিত ক্লাস করানো, গণিতে বানিজ্যিক প্রসারতা ইত্যাদি। অকৃতকার্যের দ্বিতীয়স্থান হলো ইংরেজি। ইংরেজি শিক্ষা আমাদের প্রাথমিক থেকে শুরু তারপরেও হাজার হাজার ছাত্র ইংরেজিতে ফেল করে। আবার যারা পাশ করে তারাও ইংরেজি পারদর্শী না। কোনমতে মুখস্ত করে পরিক্ষায় লিখেছে পরে সব ভুলে গেছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দৈনিক যুগান্তরের রির্পোটে জানা যায়, “দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবছর তথ্যগত পরিসংখ্যান ও সমীক্ষা প্রকাশ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। প্রতিষ্ঠানটির ‘বাংলাদেশ এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন ৯৬ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ২৮২ জন শিক্ষক শুধু ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। এটা মোট শিক্ষকের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে আবার ৬ হাজার ২৪১ জন শিক্ষকের ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, এইচএসসি পাশ করা ৩ হাজার ৮৫৭ জন ক্লাসে ইংরেজি পড়ান। বাকিদের স্নাতক ডিগ্রি থাকলেও কেউ স্নাতক হওয়ার জন্য ১০০ বা ৩০০ নম্বরের ইংরেজি পড়ে এসেছেন। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের পড়ানো শিক্ষকদের ৮৪ শতাংশেরই এ বিষয়ে ডিগ্রি নেই।“
ওই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক ৬৭ হাজার ৯৫৫ জন। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ১৩ হাজার ১২৭ জন। তাদের মধ্যে গণিতে শুধু স্নাতক আছে কিন্তু স্নাতকোত্তর করেননি এমন আছেন ৫ হাজার ৮৪৩ জন। বাকি ৭ হাজার ২৮৫ শিক্ষক গণিতে স্নাতকোত্তর আছে কিন্তু স্নাতক করেছেন কিনা তা জানা যায়নি। এই হিসাবে গণিতে ডিগ্রিধারী আছেন শুধু ১৯ শতাংশ শিক্ষক। এ ক্ষেত্রে হতাশাজনক তথ্য হচ্ছে, এসএসসির পর কোনোদিন গণিত পড়েননি এমন শিক্ষক আছেন ৮২৫৮ জন যা মোট শিক্ষকের ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর অন্য বিষয়ে স্নাতক কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত পড়ে এসেছেন এমন আছেন ১৬২৫৬ জন, যা প্রায় ২৪ শতাংশ। সবমিলে গণিতে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি না থাকা শিক্ষকের হার ৮১ শতাংশ।
গণিত ও ইংরেজি ছাড়া আরো ভয়াবহ তথ্য হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষক। এই বিষয়ের শিক্ষকের সিংহভাগ কমপিউটার সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমাধারী তাও আবার নকল সনদধারী আছে। ২৮ মে ২০২২ প্রথম আলোতে প্রকাশিত রির্পোট,” ডিআইএ ২০১৩ সাল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোট ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের শিক্ষাগত এবং যোগ্যতার সনদ ভুয়া বলে তথ্য পেয়েছে।“
উপরের বিশ্লেষণে বিশেষ বিষয় গুরুত্বের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। সেই সাথে যথাযথা প্রশিক্ষণের বিষয়টিও অনুভব করা যায়। নতুন শিক্ষাক্রমে (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১) প্রশিক্ষণ ও বিষয় গুরুত্ব আরোপ করে দিয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে বিশেষ বিষয় বা মেজর বিষয় বলতে কোন বিষয় রাখা হয়নি। এখানে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দশটি বিষয় রাখা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দশটি বিষয় হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান,ডিজিটাল প্রযুক্তি,ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা,ধর্ম শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিক বিষয় ক্রসকাটিং হিসেবে অন্য বিষয়ের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা আছে। নবম দশম শ্রেণিতে নাই বিভাগ বিভাজন। অর্থাৎ মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা নামক গ্রুপ থাকবে না তবে এই গ্রুপের মৌলিক বিষয়গুলো ক্রসকাটিং হিসেবে অন্য বিষয়ের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা আছে। শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন করেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে।কাজেই পাবলিক পরীক্ষায় বেশি চাপ থাকবে না।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালে শিক্ষাক্রম বিস্তরণের প্রথমেই পাইলট প্রজেক্ট করে, ২০২৩ সালে বিস্তরণের প্রথম ধাপ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হয়। ২০২৪ সালে অষ্টম এবং নবম শ্রেণিতে শুরুর প্রাককালে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষের আগেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর বিস্তরণ প্রশিক্ষণ হয় অফলাইন এবং অনলাইনে। নতুন শিখন বাস্তবায়নে সকল শিক্ষকদের দেয়া হয় শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি গাইড।
রূপরেখা ২০২১ এর বিস্তরণ প্রাসণের অন্যতম হাতিয়ার হলো সহায়িকা বা টিজি গাইড। এই সহায়িকা বা টিজি গাইডে বিষয়ের শিক্ষাবর্ষে শিক্ষকের যাবতীয় শ্রেণিকার্যের নির্দেশনাবলী দেয়া আছে। যা পড়ে শিক্ষক অতিসহজেই শিখন কাজ পরিচালনা করতে পারে। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক যোগ্যতাবলী অর্জনের নিয়মকানুন সহজ ভাষায় সহায়িকা বা টিজি গাইডে আছে। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে পুরো শিখন-শেখানো কার্যক্রমের রূপরেখা সহায়িকা বা টিজি গাইড শিক্ষকের হাতেই আছে। শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি গাইড অনুসারে পাঠদান করলে এবং শিক্ষণকালীন মুল্যায়ন করলে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ১০০% সফলতা আসবে। এটা বাস্তব সম্মত সম্ভব।
লেখক: মোহাম্মদ শাহজামান শুভ
সিনিয়র শিক্ষক
বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলি আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,
তিতাস, কুমিল্লা
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
লেখা পাঠান আমাদের নিকট : shiksharalo.news@gmail.com
লিখুন শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, ফিচার, কলাম, মতামত। পাঠিয়ে দিন উপরোক্ত পত্রিকার মেইলে। লেখার শেষে মোবাইল নম্বর ও ছবি পাঠাতে ভুলবেন না , ধন্যবাদ…………………………….
ফলো করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : শিক্ষার আলো ডট কম
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : Shikshar Alo
Posted ১০:১০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো